ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার নিয়ম ও বয়স-পার্শ্বপ্রতিকরা,ল্যাকটোজেন ১ বানানোর নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি কি ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমি এই পোষ্টের মধ্যে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স এবং ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার নিয়ম ও ল্যাকটোজেন ১ এর দাম সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়াও আপনি এই পোষ্টের মধ্যে পাবেন ল্যাকটোজেন ১ বানানোর নিয়ম এবং ল্যাকটোজেন ১ এর উপকারিতা ও ল্যাকটোজেন ১ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি সেগুলো সম্পর্কে। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে পোষ্টের দিকে আগানো যাক।
ভূমিকা
একটি শিশু পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার পর তার জন্য প্রধান খাবার হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ। যখন কোন সমস্যার কারণে সে তার মায়ের বুকের দুধ খেতে না পড়ে অথবা ডাক্তাররা খেতে মানা করে তখন তাদেরকে গুড়া দুধ খাওয়ানো হয় গুড়া দুধের মধ্যে একটি হচ্ছে ল্যাকটোজেন। বিশ্ব সংস্থা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব বড় বড় ডাক্তার দুধ খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে।
ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার বয়স
ল্যাকটোজেন ১ হচ্ছে সেই সব শিশুদের জন্য যারা পৃথিবীতে আসার পরে থেকে মায়ের দুধ পান করা থেকে বিরত থাকে অর্থাৎ যারা একেবারে নবজাতক তাদের জন্য। এই দুধ তৈরি করা হয়েছে শূন্য থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য। প্রতিটি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে খাওয়ানোর নিয়ম পরিবর্তন হয়। একেক সপ্তাহে একেক ভাবে খাওয়াতে হয়।
যখন বাচ্চার বয়স আস্তে আস্তে বেশি হতে থাকবে তখন খাওয়ানোর নিয়মও আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকবে। ছয় মাস পার হওয়ার পরে কখনোই তাদেরকে এই দুধ খাওয়ানো উচিত হবে না। তখন তাদের জন্য ভিন্ন দুধ রয়েছে তাদেরকে সেই সময় সেটা খাওয়াতে হবে।
ল্যাকটোজেন ১ বানানোর নিয়ম
শিশুকে খাওয়ানোর জন্য যেসব ঔষধ বা পাউডার বা গুঁড়া দুধ তৈরি করা হয় সেগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সহিত তৈরি করা উচিত। কারণ একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল হয়। খুব অল্পতেই এরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই শিশুকে খাওয়ানোর জন্য চেয়ে দুধটা আমরা তৈরি করব সেটা খুবই সতর্কতার সাথে তৈরি করব।
আপনার বাচ্চার জন্য দুধ তৈরি করার জন্য যে ফিডারটি ব্যবহার করবেন প্রথমেই সেই ফিডারটিকে গরম পানিতে ধুয়ে নিবেন। এতে করে ফিডারটি সম্পূর্ণভাবে জীবাণু মুক্ত হয়ে যাবে। আপনি আপনার বাচ্চাকে যে ফিডার ব্যবহার করে দুধ খাওয়াবেন ফিডারটি অবশ্যই একটি ভালো কোম্পানির ও ভালো মানের হয় এটা নিশ্চিত করবেন।
কারণ সস্তা কোন ফিডার ব্যবহার করে আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ালে পরবর্তীতে বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যা বা অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।প্রথমেই বাচ্চাকে যে পরিমাণ দুধ খাওয়াবেন সেই পরিমাণ পানি গরম করে নিবেন। বাচ্চার জন্য গরম করা পানি কিছুক্ষণ রেখে দিন এবং বাচ্চার খাওয়ার উপযোগী পরিমাণ ঠান্ডা হলে এটি ব্যবহার করুন।
এক সপ্তাহের বাচ্চার জন্য ৯০ মিলি পানিতে তিন চামচ ল্যাক্টোজেন ১ এক মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। বাচ্চার বয়স যদি তিন থেকে চার সপ্তাহ হয় সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের ১২০ মিলিয়ে পানিতে ৪ চামচ ল্যাক্টোজেন ১ মেশাতে হবে।বাচ্চার বয়স দুই মাস হলে ১৫০ মিলির ফিডারে ৫ চামচ ল্যাকটোজেন ১ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। আবার বাচ্চার বয়স যখন তিন থেকে চার মাস হবে তখন তাকে ১৮০ মিলি পানিতে ছয় চামচ পরিমাণ ল্যাক্টোজেন ১ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
ল্যাকটোজেন ১ এর উপকারিতা
একটি শিশু পৃথিবীতে জন্মের পর তার জন্য সবচেয়ে উত্তম খাবার হচ্ছে তার মায়ের বুকের দুধ। অনেক সময় অনেক কারণে মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য খাওয়ানো যায় না সেক্ষেত্রে ল্যাকটোজেন 1 খাওয়ানো হয়। এই দুধে এমন কিছু উপকারিতা রয়েছে যা শিশুর বেড়ে ওঠা এবং দুধের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।ল্যাকটোজেন ১ এই দুধে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, মস্তিষ্ক, ভিটামিন আইরন খনিজ উপাদান গুলো রয়েছে যেগুলো একটি শিশুর জন্য অত্যন্ত জরুরী।
এই দুধ শিশুকে খাওয়ানোর ফলে শিশুর শরীরে রক্ত কণিকা গঠন হয় এবং শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। শরীরের হাড় এবং দাঁতে যেই পরিমাণ ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়এই দুধে সেই পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে যা একটি শিশুকে খাওয়ালে তার শরীরের হাড় এবং দাঁত শক্ত হয়। একটি শিশুর যতটুকু দুধের চাহিদা থাকে
এই দুধ খাওয়ানোর ফলে শরীরে সেই মোতাবেক চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে যত বড় বড় মেডিকেল রয়েছে সেগুলোর মতে মায়ের বুকের দুধে শিশুর জন্য উপযোগীকিন্তু যখন তা সরবর করা হয় না তখন এই দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এই দুধের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে তার শিশুকে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ার নিয়ম
শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়মও পরিবর্তন হতে থাকবে। শূণ্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো উচিত। এর চেয়ে বেশী বয়সের বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানো উচিত নয়। বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বাচ্চার বয়স যখন এক থেকে দুই সপ্তাহ হবে তখন ৯০ মিলির ফিডারে তিন চামচ ল্যাকটোজেন ১ মিশিয়ে প্রতিদিন ছয়বার করে খাওয়াতে হবে। উল্লেখিত পরিমানের চেয়ে বেশি কখনোই খাওয়াবেন না। এতে করে শিশুর সমস্যা হতে পারে। শিশুর বয়স যখন তিন থেকে চার সপ্তাহ হবে তখন চার চামচ ল্যাকটোজেন ১ ১২০ মিলি পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার খাওয়াতে হবে।
বাচ্চার বয়স যখন আরেকটু বেশি হবে অর্থাৎ দুই মাস বয়স হলে বাচ্চার খাবারের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সে ক্ষেত্রে তাকে ৫ চামচ ল্যাক্টোজেন ১ ১২০ মিলি ফিডারে মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার খাওয়াবেন।তারপর শিশুর বয়স যখন তিন থেকে চার মাস হবে তখন তাকে ১৮০ মিলির ফিডারে ছয় চামচ পরিমাণ ল্যাকটোজেন ১ মিশিয়ে রাত এবং দিন মিলিয়ে পাঁচবার খাওয়াবেন।
আপনার বাচ্চার বয়স যখন পাঁচ মাস চলমান থাকবে অর্থাৎ ছয় মাস হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ২২০ মিলি ফেডারে সাত চামচ ল্যাকটোজেন ১ এক মিশিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার করে খাওয়াবেন। মূলত এটি হলো ৬ মাস পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর নিয়ম। তবে সকল প্রকার ওষুধ বা দুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়ানো উচিত।
বাচ্চাকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়ানোর সময় খুব সর্তকতা অবলম্বন করবেন। অন্যথায় বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
ল্যাকটোজেন ১ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যখন আপনার শিশুকে এই দুধ নিয়মের বিপরীতে খাওয়াবেন এবং পরিমাণের তুলনায় অতিরিক্ত খাওয়াবেন তখন তার শিশুর জন্য ক্ষতিকর হবে এবং বিভিন্ন রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। যেমন বমি হওয়া পেট খারাপ হওয়া পাতলা পায়খানা ঠিকমতো হজম না হওয়া বাচ্চাকে শান্ত না করার মত সমস্যা দেখা দিবে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তখনি দেখা দেয় যখন বাচ্চাকে নিয়মের বিপরীতে খাওয়ানো হয়। অবশ্যই কোন বাচ্চাকে এ দুধ খাওয়ানোর পূর্বে নিয়ম ভালোভাবে পড়ে নেবেন তাহলে আর আপনার বাচ্চার কোন রকমের ক্ষতি হবে না এবং কোন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ের প্রভাব পড়বে না। এই দুধকে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প হিসেবে ধরা হয়
অর্থাৎ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে নিয়ম দেখে নিবেন এবং সতর্কতার সাথে খাওয়াবেন তাহলে আপনার বাচ্চার জন্য এই দুধ উপকারী হবে এবং কোন রকমের ক্ষতি হবে না।
ল্যাকটোজেন ১ এর দাম
পরিমাণের উপর নির্ভর করে ল্যাকটোজেন ১ এর দামের তারতম্য দেখা যায়। বাংলাদেশে তিন ধরণের পরিমাণের প্যাকেট বা কৌটা পাওয়া যায়। দেশের সব অঞ্চলেই এবং সবসময়ই এর দাম একই হয়ে থাকে। তারপরেও কেনার আগে আপনি অবশই এর গায়ে লেখা দাম দেখে কিনবেন। নিচে ল্যাকটোজেন ১ এর দাম দেওয়া হলোঃ
- ১৮০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১ এর দাম ২৫০ টাকা।
- ৩৫০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১ এর দাম ৬৫০ টাকা।
- ৪০০ গ্রাম ল্যাকটোজেন ১ এর দাম ৮৫০ টাকা।
আপনার বাচ্চার জন্য আপনি যেসব ঔষধ বা পণ্যসামগ্রী কিনবেন সেগুলো কেনার আগে আবশ্যই সেই জিনিসের উৎপাদনের তারিখ ও এর মেয়াদ উর্ত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিবেন।
ল্যাকটোজেন ১ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর - FAQ
ল্যাকটোজেন ১ কি বাচ্চার ওজন বাড়ায়?
হ্যাঁ এই দুধ খাওয়ানোর কারণে বাচ্চার ওজন কিছুতে বাড়তে পারে কারণ এই দুধের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, সুতরাং আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর পরে যদি বাচ্চার ওজন বাড়তে থাকে তাহলে চিনতে তো হওয়ার কারণ নেই.
ল্যাকটোজেন দিনে কত ঘন্টা রাখা যায়?
দুধ বানানোর পরে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে এক ঘন্টার মধ্যে সেটা তাদেরকে সম্পূর্ণ খাওয়ায় দেয়া যদি কোন কারণে তারা না খায় তাহলে তা ঘরের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে এক ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যাবে আর যদি তা ফ্রিজে রাখেন সে ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যাবে
ল্যাকটোজেন ১ কতবার খাওয়ানো উচিত?
1 ম এবং 2 য় সপ্তাহ - 90 মিলি আগে ফুটানো জল- 3 লেভেল স্কুপ গুঁড়ো ফর্মুলা- প্রতিদিন 6 ফিড। 3 য় এবং 4 ম সপ্তাহ- 120 মিলি আগে ফুটানো জল- গুঁড়ো ফর্মুলার 4 স্তরের স্কুপ- প্রতিদিন 5টি ফিড। 2 য় মাস- 150 মিলি আগে ফুটানো জল- 5 লেভেল স্কুপ গুঁড়ো ফর্মুলা- প্রতিদিন 5 ফিড।
7 মাসের বাচ্চার জন্য ল্যাকটোজেন খাওয়া উচিত?
ল্যাকটোজেন এক হতে সেসব বাচ্চাদের জন্য যাদের বয়স শূন্য থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সুতরাং আপনার বাচ্চার বয়স যদি সাত মাস হয়ে যায় তাহলে তাদেরকে ল্যাকটোজেন ২ খাওয়াতে হবে
ল্যাকটোজেন কি শিশুর জন্য ক্ষতিকর?
এ দুধ বাচ্চাদের শরীরের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি করা হয় বাচ্চাদের শরীরের জন্য এই দুধ উপকারী কোনোভাবে ক্ষতি করো না অনেক বাচ্চা আছে যারা এ দুধ খাওয়ার পরে হজম করতে পারে না সে ক্ষেত্রে বমি করে দেয় বা পায়খানা সমস্যা হয় যদি এরকম কোন সমস্যা দেখেন তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন
উপসংহার
এ দুধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন ডাক্তার যদি এ দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয় তাহলে আপনি আপনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াবেন অন্যথায় আপনার বাচ্চাকে এই দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকবেন,,
জানবো আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url