বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়ম - প্রিপেইড মিটার টোকেন নম্বর চেক
আজকের এই আর্টিকেলে বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়ম ব্যাখ্যা করা হবে। তাই আপনি যদি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে তাই মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত করার চেষ্টা করবেন।
যদিও এই মিটার সিস্টেম বাংলাদেশের সমগ্র জেলায় এখনো পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হয়নি সেহেতু এর ব্যবহার অনেকেরই অজানা। যারা এই মিটার সম্পর্কে জানেন না তারা চাইলে শুধুমাত্র একটি আর্টিকেল পড়ে এই মিটারের আদ্যপ্রান্ত জেনে নিতে পারবেন। তাই এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।
প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের নিয়ম
প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করা খুবই সহজ। আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে খুব সহজ এবং সাবলীল ভাষায় প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের নিয়ম উল্লেখ করা হবে। এই সহজ নিয়ম অনুসারে আপনি যদি প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন তাহলে এর যাবতীয় সকল কাজ খুব সহজেই সমাধান করতে পারবেন। তো চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সর্বপ্রথম মিটার রিচার্জ করতে হবে। আপনি বেশ কয়েকটি মাধ্যম অবলম্বন করে আপনার মিটার রিচার্জ করে দিতে পারবেন। আপনার বাসা যদি বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসের কাছাকাছি হয় তাহলে আপনি আপনার নিকটতম বিদ্যুৎ বিভাগের ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে রিচার্জ করতে পারেন। এই পদ্ধতিটি আগে থেকেই অনেক জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত।
এছাড়া যদি আপনার হাতে সময় না থাকে কিংবা আপনার বাসা যদি দূরে হয় তাহলে আপনি অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিটার রিচার্জ করে নিতে পারবেন। আপনি চাইলে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করে রিচার্জ করতে পারেন কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে রিচার্জ করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
মিটার রিচার্জ করার পরে আপনি আপনার রিচার্জ করার টাকা অনুসারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। মিটারে আপনার টাকার পরিমান এবং আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুতের ইউনিট দেখা যাবে। অর্থাৎ আপনার মিটারে অবশিষ্ট কত টাকা রয়েছে এবং আপনি কতটুকু বিদ্যুৎ খরচ করছেন আপনি দেখতে পাবেন। আপনার রিচার্জ করা টাকা শেষ হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ আপনার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে।
আপনার রিচার্জ করা টাকা শেষ হওয়ার পূর্বেই কর্তৃপক্ষ আপনাকে জানিয়ে দিবে। কর্তৃপক্ষ আপনাকে বিভিন্নভাবে যেমনঃ এসএমএস, বিলের কপি ইত্যাদির মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারে। কিংবা অনেক সময় মিটারে একটি এলার্ম সেট করা থাকে যেটি রিচার্জের টাকা শেষ হওয়ার পূর্বেই বেজে ওঠে। আবার অনেক সময় মিটারের ডিসপ্লেতে লেখা দেখায়।
তবে এই মিটারের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেহেতু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পূর্বেই আপনাকে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে সেহেতু এটি অনেকটা মোবাইলে রিচার্জ করার মত। অর্থাৎ টাকা থাকলে যেমন আপনি মোবাইলে কথা বলতে পারবেন তেমনি শুধুমাত্র টাকা থাকলেই আপনি আপনার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। তাই এভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ বিল অনেক সাশ্রয় হবে।
আবার আপনার যদি কোন মাসে বিদ্যুতের প্রয়োজন না থাকে তাহলে আপনি রিচার্জ করবেন না, তাহলে সেই মাসের বিদ্যুৎ বিল আপনাকে পরিশোধ করতে হবে না। আবার অন্যদিকে প্রিপেইড মিটারের রিচার্জ করার মাধ্যম অনেক সহজ অর্থাৎ আপনি বাসা থেকেই এর বিল পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও বাংলাদেশর সব স্থানে এখনো এটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি তবে এর প্রক্রিয়াকরণ চলছে।
প্রিপেইড মিটারের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা ও রয়েছে। আগের মিটার অনুসারে আপনি দুই থেকে তিন মাসের বিল একবারে পরিশোধ করতে পারতেন কিন্তু প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে আপনাকে প্রতিমাসের বিল প্রতি মাসেই পরিশোধ করতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মিটার রিচার্জ করার সময় আপনাকে অতিরিক্ত অর্থও প্রদান করতে হতে পারে।
প্রিপেইড মিটার রিচার্জ কোড
যেহেতু প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার জন্য কোডের প্রয়োজন হয় সেহেতু এখন অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে এই কোড কোথায় পাবো? অর্থাৎ অনেকেই জানে না এই কোড কিভাবে বের করতে হয়। আপনারা যখন বিদ্যুৎ বিভাগের ভেন্ডিং স্টেশন, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ, অথবা অনলাইনে রিচার্জ করতে চান তখন আপনাদের ২০ সংখ্যার একটি কোড বা নাম্বার প্রদান করতে হয়।
ভেন্ডিং স্টেশন: আপনি আপনার নিকটতম বিদ্যুৎ বিভাগের ভেন্ডিং স্টেশনে গিয়ে রিচার্জ করতে পারেন। রিচার্জ করার পর ভেন্ডিং স্টেশন থেকে একটি কাগজের রসিদ দেওয়া হবে। রসিদে আপনার মিটার আইডি এবং 20 ডিজিটের রিচার্জ কোড থাকবে।
মোবাইল ব্যাংকিং: আপনি আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করে রিচার্জ করতে পারেন। রিচার্জ করার পর আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠানো হবে। এসএমএসে আপনার মিটার আইডি এবং 20 ডিজিটের রিচার্জ কোড থাকবে।
প্রথম 11 ডিজিট হলো মিটার আইডি এবং শেষ 9 ডিজিট হলো টোকেন নম্বর। উদাহরণ: 641887862991-67809510 এখানে মিটার আইডি: 641887862991 এবং 67809510 হলো টোকেন নাম্বার। আশা করি বুঝতে পেরেছেন আপনি যে কোডটি খুঁজছেন সেটি এরকম হবে। এখন আপনি চাইলেই আপনার কোড নাম্বার খুজে বের করতে পারবেন এবং তা ব্যবহার করে আপনার মিটার রিচার্জ করতে পারবেন।
প্রিপেইড মিটার রিচার্জ হচ্ছে না
বেশ কিছু কারণে আপনার প্রিপেইড মিটার রিচার্জ না হতে পারে। আপনি যদি ভুল রিচার্জ কোড প্রবেশ করান তাহলে আপনার মিটার রিচার্জ হবে না। অনেক সময় অনেকে তাড়াহুড়ার কারণে ভুল করে ভুল কোড নাম্বার বসিয়ে মিটার রিচার্জ করে যার ফলে মিটার রিচার্জ হয় না। এজন্য কোড ব্যবহারের সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে ব্যবহার করবেন যাতে বিভ্রান্তিতে ভুগতে না হয়।
আবার অনেক সময় ইন্টারনেটের কারণেও এমনটা হয়ে থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সার্ভারের সমস্যা এবং কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মিটার রিসার্চ হয় না। আপনিও যদি এ ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হন তাহলে একটু পরে আবার চেষ্টা করুন। অনেক সময় সবকিছু ঠিক থাকার পরেও মিটার রিচার্জ হয় না যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। তাই একটু অপেক্ষা করে আবার চেষ্টা করো।
বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়ম
বর্তমানে বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার জন্য জনপ্রিয় তিনটি মাধ্যম রয়েছে। এই তিনটি মাধ্যম হলোঃ ভেন্ডিং স্টেশন, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ওয়েবসাইটে পেমেন্ট। আপনি নিম্নের যেকোন মাধ্যম অবলম্বন করে আপনার বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে পারবেন। তো চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত সকল পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক।
ভেন্ডিং স্টেশন এর মাধ্যমে বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা সবচেয়ে প্রাচীন এবং বিশ্বস্ত একটি মাধ্যম। আপনার বাসা যদি ভেন্ডিং স্টেশন এর কাছাকাছি হয় তাহলে আপনি ওই অফিসে গিয়ে আপনার মিটার রিচার্জ করতে পারবেন। প্রথমে আপনার মিটার আইডি এবং রিচার্জের পরিমাণ জানান এবং নগদ অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিন। পরিশেষে রিচার্জ কোড সংগ্রহ করুন।
যেহেতু বর্তমান যুগ আধুনিক এবং মডার্ন সেহেতু অনেকেই আধুনিক মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে। আপনি চাইলে আপনার মিটার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও পরিশোধ করতে পারবেন কিংবা রিচার্জ করতে পারবেন। প্রথমে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপে যান তারপর "বিদ্যুৎ" অপশনে যান।বিপিডিবি প্রিপেইড অপশন নির্বাচন করুন এবং আপনার মিটার আইডি এবং রিচার্জের পরিমাণ প্রবেশ করিয়ে পেমেন্ট অপশন এ ক্লিক করুন।
মিটার রিচার্জ করার পর মিটারের "রিচার্জ" অপশনে ক্লিক করুন এবং রিচার্জ কোড (টোকেন) প্রবেশ করান এবং এন্টার অপশনে ক্লিক করে রিচার্জের পরিমাণ আপনার মিটারে জমা করুন। তবে রিচার্জ করার আগে আপনার মিটারের ব্যালেন্স চেক করুন এবং রিচার্জের রসিদ অথবা এসএমএসটি সংরক্ষণ করে রাখুন। আপনার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য নিয়মিত আপনার মিটার রিচার্জ করুন।
বিকাশ থেকে বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়ম
বিকাশ থেকে বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার জন্য আপনাকে বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। আর আপনি যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে বিকাশের অফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশন প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিবেন। বিকাশ অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করার পরে আপনার সিম কার্ডের নাম্বার এবং এনআইডি কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন।
এরপরে প্রথমে বিকাশ অ্যাপ্লিকেশনটি ওপেন করবেন। এরপর পেমেন্ট অপশনে যাবেন এবং বিদ্যুৎ অপশন বিদ্যুৎ অপশনে ক্লিক করবেন। তারপরে "বিপিডিবি প্রিপেইড" অপশনটিতে যাবেন এবং আপনার মিটার নাম্বার লিখে সাবমিট করবেন। এরপর আপনি যত টাকা এটি রিচার্জ করতে চাচ্ছেন তা সিলেক্ট করবেন। সিলেক্ট করার পরে আপনার বিকাশের পিন নাম্বার দিয়ে পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করবেন।
রিচার্জ সফল হলে, আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠানো হবে। অনেক সময় ভুল তথ্য প্রদান করার মোবাইলে এসএমএস আসে না। এজন্য পেমেন্ট করার পূর্বে আবার সবকিছু দেখে নেবেন যাতে কোন তথ্য আপনি ভুল প্রদান না করেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে বিকাশ থেকে বিপিডিবি প্রিপেইড মিটার রিচার্জ। আমি আশা করি এখন আপনি নিজেই এই কাজটি করতে পারবেন।
প্রিপেইড মিটার টোকেন নম্বর চেক
আপনি বেশ কয়েকটি মাধ্যমে প্রিপেইড মিটার টোকেন নাম্বার চেক করতে পারবেন। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আপনার মিটারের ডিসপ্লের ব্যালেন্স প্রথমে চাপ দিন তাহলে টোকেন নম্বর ডিসপ্লেতে দেখাবে। এটি হলো সবচেয়ে সহজ এবং বিশ্বস্ত মাধ্যম। আবার আপনি আপনার মোবাইলের মাধ্যমে টোকেন নাম্বার চেক করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে আপনার মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে "METER <মিটার নম্বর>" টাইপ করে 16247 নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।
কিছুক্ষণ পর আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠানো হবে। এসএমএসে আপনার টোকেন নম্বর থাকবে। আবার আপনি যদি এটা না পারেন তাহলে বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন এবং "অনলাইন সার্ভিস" অপশনে যাবেন। তারপরে "প্রিপেইড মিটার ব্যালেন্স চেক" অপশন নির্বাচন করবেন। এরপর আপনার মিটার নম্বর এবং মোবাইল নম্বর প্রবেশ করবেন।
সঠিক মোবাইল নাম্বারটি প্রদানের পরে "সাবমিট" ক্লিক করুন তাহলে আপনার টোকেন নম্বর ওয়েবসাইটে দেখানো হবে। এই উপায়গুলো বাদেও আপনি টোকেন নাম্বার চেক করতে পারবেন তবে এজন্য আপনাকে বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসে যেতে হবে। অফিসে গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে আপনার মিটার নম্বর এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে টোকেন নম্বর জিজ্ঞাসা করবেন তাহলে পেয়ে যাবেন।
শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলে প্রিপেইড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই ধরনের নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। তো আজকে এই পর্যন্তই, আবার দেখা হবে অন্য কোন আর্টিকেলে অন্য কোন বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য। ততক্ষণ সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।
জানবো আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url